যা বুঝিনা তা মানবো কেন?
আপনার প্রশ্নটা খুবই গভীর ও গুরুত্বপূর্ণ:
"যা বুঝি না, তা মানবো কেন?"
এই প্রশ্নটি অনেকেই করে থাকেন—বিশেষত বিশ্বাস, ধর্ম, কিংবা আল্লাহ্কে নিয়ে। চলুন, বিষয়টি যুক্তি, দর্শন ও ইসলামি দৃষ্টিকোণ থেকে পর্যায়ক্রমে বিশ্লেষণ করি।
১. সবকিছু বুঝে নেওয়া কি সম্ভব?
আমরা প্রতিদিনই অনেক কিছু বুঝি না, তবুও বিশ্বাস করি বা মেনে চলি। উদাহরণ:
জিনিস | আমরা বুঝি না | তবুও বিশ্বাস করি |
WiFi / মোবাইল নেটওয়ার্ক | কিভাবে বাতাসে ডেটা যায়? | ব্যবহার করি |
মাথা ব্যথায় প্যারাসিটামল | কিভাবে কাজ করে? | খাই |
চিকিৎসক প্রেসক্রিপশন | জটিল টার্ম বুঝি না | অনুসরণ করি |
অর্থাৎ, অবুঝ ≠ মিথ্যা। কিছু বিষয় আমরা সময়ের সাথে বুঝতে শিখি, আবার কিছু আমাদের জ্ঞানের সীমার বাইরে।
২. "যা বুঝি না তা মানবো না"— এই যুক্তির সীমাবদ্ধতা
এই যুক্তি পুরোপুরি অনুসরণ করলে:
তাই, আমরা বিশ্বাস, অভিজ্ঞতা ও গ্রহণযোগ্য সূত্রে নির্ভর করেই বহু বিষয় মেনে নিই।
৩. কোরআনের দৃষ্টিভঙ্গি:
কোরআন বলে, মানুষকে আকল (বুদ্ধি) দিয়ে সৃষ্টি করা হয়েছে যেন সে চিন্তা করে। কিন্তু সে সব কিছু সম্পূর্ণভাবে বুঝে ফেলবে—এমনটা নয়।
"তাদেরকে আমি আমার নিদর্শনাবলি দেখাবো, আকাশ-মণ্ডলে ও তাদের নিজেদের মধ্যেও, যতক্ষণ না তাদের কাছে পরিষ্কার হয়ে যায় যে, এ (কোরআন) সত্য।"
— সূরা ফুস্সিলাত, ৪১:৫৩
"তোমাদের জ্ঞান তো সামান্যই দেওয়া হয়েছে।"
— সূরা ইসরা, ১৭:৮৫
ইসলাম কখনও অন্ধ অনুসরণের কথা বলেনি, বরং যুক্তিভিত্তিক চিন্তার কথা বলেছে:
"তবে কি তারা চিন্তা করবে না?"
— সূরা আনকাবুত, ২৯:২০
তাহলে কি সবকিছু না বুঝেই মানতে হবে?
না, ইসলাম বলে:
বিশ্বাস ও যুক্তির সহাবস্থান
বিষয় | বিশ্বাস | যুক্তি |
সৃষ্টিকর্তা | অদেখা | সৃষ্টি থেকে প্রমাণ |
কোরআন | আসমানি কিতাব | ভাষা, তথ্য, ভবিষ্যদ্বাণীর অসাধারণতা |
হাদিস | নবীজির বাণী | সহীহ সূত্র, চরিত্র ও প্রচার ধারাবাহিকতা |
আপনি নিজেও যাচাই করতে পারেন, ইসলাম শুধু “মানো মানো” করে না, বরং “চিন্তা করো, যাচাই করো, মেনে নাও” এই দৃষ্টিভঙ্গি দেয়।
"যা বুঝি না, তা মানবো না"—এটা একদম খারিজ করার মতো নয়।
বরং সঠিক দৃষ্টিভঙ্গি হবে:
"আমি বুঝতে চেষ্টা করবো, নির্ভরযোগ্য প্রমাণ দেখবো, যুক্তি দিয়ে বিচার করবো— আর তারপর গ্রহণ করবো।"