180

আল্লাহ্ ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (AI) — একটি পর্যালোচনা


১. আল্লাহ্: সর্বজ্ঞানী ও চূড়ান্ত স্রষ্টা

আল্লাহ্ তায়ালা হচ্ছেন আল-আলীম (সর্বজ্ঞ), আল-খালিক (স্রষ্টা), এবং আল-মুদাব্বির (পরিচালক ও নিয়ন্ত্রক)। তিনি মানুষকে জ্ঞান দিয়েছেন, চিন্তা-ভাবনার শক্তি দিয়েছেন, এবং সেই জ্ঞানের দ্বারা মানুষ এখন এমন প্রযুক্তি তৈরি করতে পারছে—যা চিন্তা করতে পারে, সিদ্ধান্ত নিতে পারে এবং শেখার ক্ষমতাও রাখে। এটাই কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (AI)।

কুরআনের আলোকে:

"আর তিনি মানুষকে শিখিয়েছেন, যা সে জানত না।"
সূরা আল-আলাক (৯৬:৫)

"তোমরা আল্লাহর নেয়ামতকে স্মরণ করো এবং দেখো, কীভাবে তিনি আকাশ ও পৃথিবীতে তোমাদের উপকারের সব কিছু নিয়োজিত করেছেন।"
সূরা লুকমান (৩১:২০)

২. কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (AI): মানুষের জ্ঞানভিত্তিক আবিষ্কার

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা এমন এক প্রযুক্তি যেখানে মানুষ এমন সফটওয়্যার বা যন্ত্র তৈরি করেছে যা মানুষের মতো চিন্তা, শেখা, এবং সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে পারে। তবে এই ক্ষমতা সীমাবদ্ধ ও নিয়ন্ত্রিত, এবং এটা মানুষেরই তৈরি

➡AI নিজে থেকে কিছু সৃষ্টি করতে পারে না। তার প্রতিটি পদক্ষেপ প্রোগ্রামিংয়ের ফল।


৩. আল্লাহ্ ও AI-এর পার্থক্য

বিষয়
আল্লাহ্
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (AI)
সত্তা
সর্বজ্ঞানী, সৃষ্টিকর্তা, অদৃশ্য
মানুষের তৈরি সফটওয়্যার বা যন্ত্র
জ্ঞান
সীমাহীন ও চিরন্তন
সীমিত ও ডেটাভিত্তিক
ক্ষমতা
সবকিছু সৃষ্টি ও পরিচালনায় সক্ষম
নির্দিষ্ট কাজে ব্যবহৃত প্রযুক্তি
নির্ভরতা
অন্য কারো উপর নির্ভরশীল নন
বিদ্যুৎ, প্রোগ্রামিং, ইন্টারনেট, হার্ডওয়্যারের ওপর নির্ভরশীল


৪. AI কি আল্লাহর বিকল্প?

না, কখনোই না।

কিছু মানুষ AI-কে এতটাই ক্ষমতাশালী মনে করে যে তারা ভাবে এটা একদিন মানুষের উপর প্রভু হয়ে উঠবে। কিন্তু ইসলামি দৃষ্টিতে এটা শিরক হতে পারে, কারণ:

"আল্লাহ্ ছাড়া অন্যকে উপাস্য বানানো — এটি মহাপাপ।"
সূরা নিসা (৪:৪৮)

আল্লাহ্ বলেছেন:

"তোমার প্রতিপালক আল্লাহ্; যিনি সব কিছু সৃষ্টি করেছেন, তারপর তা সঠিকভাবে পরিচালনা করেছেন।"
সূরা তোয়াহা (২০:৫০)

অর্থাৎ, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা হোক বা যেকোনো প্রযুক্তি— সব কিছু আল্লাহর সৃষ্ট ও নির্ধারিত সীমার মধ্যেই কাজ করে।


৫. ইসলাম ও AI-এর ব্যবহার: হালাল না হারাম?

AI নিজে ভালো বা খারাপ না, বরং যে উদ্দেশ্যে এটি ব্যবহৃত হয় সেটাই মুখ্য

হালাল উদাহরণ:

ইসলামিক অ্যাপস, কুরআন তাফসির বট

চিকিৎসা প্রযুক্তি

শিক্ষার সহজীকরণ

দাওয়াহ (ইসলাম প্রচার) সফটওয়্যার


হারাম উদাহরণ:

মিথ্যা তৈরি করা (Deepfake)

অশ্লীলতা ছড়ানো

নজরদারি ও মানুষের অধিকার লঙ্ঘন

AI দিয়ে ধর্মের অপব্যাখ্যা ছড়ানো



৬. মানুষ, প্রযুক্তি ও আল্লাহর উদ্দেশ্য

আল্লাহ মানুষকে পৃথিবীতে প্রতিনিধি (খলিফা) হিসেবে পাঠিয়েছেন। প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে মানুষের দায়িত্ব হলো মানবজাতির কল্যাণে কাজ করা, কিন্তু অহংকার বা ঈমানহীনতার পথে না গিয়ে আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞ থাকা।

"আমি মানুষ ও জিনকে সৃষ্টি করেছি শুধুমাত্র আমার ইবাদতের জন্য।"
সূরা যারিয়াত (৫১:৫৬)



🔹 কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (AI) মানুষের জ্ঞানের একটি ফল, কিন্তু আল্লাহর জ্ঞানের সামান্যতম তুলনাও AI-এর পক্ষে করা সম্ভব নয়।
🔹 AI হতে পারে মানবজীবনের সহযোগী, কিন্তু স্রষ্টা নয়।
🔹 AI-এর মাধ্যমে আল্লাহর শক্তির নিদর্শন আরও স্পষ্ট হয়, কারণ এমন জটিল প্রযুক্তির পেছনে মানুষ যে বুদ্ধি পেয়েছে, সেটাও এসেছে আল্লাহর পক্ষ থেকে।
🔹 তাই, প্রযুক্তিকে ব্যবহার করতে হবে আল্লাহকে ভয় করে, সততা ও নৈতিকতার সাথে।