180

হাদিসের বিশ্বাসযোগ্যতা


হাদীসের বিশ্বাসযোগ্যতা ইসলামি জ্ঞানে একটি গুরুত্বপূর্ণ ও আলোচিত বিষয়। হাদীস হচ্ছে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লামের বক্তব্যকাজঅনুমোদন  চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যের বিবরণ, যা ইসলামী শরীআতের দ্বিতীয় উৎস। তবে, এই হাদীসগুলো কতটা নির্ভরযোগ্য—তা নির্ধারণ করতে ইসলামি আলিমগণ বিস্তৃত ও সুসংগঠিত পদ্ধতি তৈরি করেছেন।


নিচে হাদীসের বিশ্বাসযোগ্যতা সম্পর্কে একটি যুক্তিনির্ভর ও কুরআন-সুন্নাহভিত্তিক বিশ্লেষণ দেওয়া হলো:


কুরআনের দৃষ্টিতে হাদীস

কুরআন নিজেই রাসূলের অনুসরণ ও তাঁর বাণী মানার নির্দেশ দিয়েছে:

রাসূল তোমাদের যা দেনতা গ্রহণ করো এবং যা নিষেধ করেনতা থেকে বিরত থাকো।
সূরা হাশর (৫৯:)

এ আয়াতের আলোকে বোঝা যায়, শুধু কুরআন নয়, রাসূলের হাদীসও ইসলাম পালনে অপরিহার্য।


হাদীসের সংরক্ষণ  যাচাই পদ্ধতি

হাদীস সংরক্ষণ কেবল মুখস্থ নয়, বরং একটি বিজ্ঞানসম্মত পদ্ধতিতে (যাকে বলে উলূমুল হাদীস) বিকশিত হয়েছে।

🔹 হাদীস যাচাইয়ের প্রধান শ্রেণীবিভাগ:

ধরণ

সংজ্ঞা

সহীহ (বিশ্বাসযোগ্য)

বর্ণনাকারী বিশ্বস্ত, সংযুক্ত সনদ, বিরোধমুক্ত ও ভুল মুক্ত

হাসান (ভালো)

সহীহ হাদীসের মতোই, তবে কোনো বর্ণনাকারীর সামান্য দুর্বলতা রয়েছে

দঈফ (দুর্বল)

সনদে কোনো সমস্যা, যেমন: বিশ্বস্ততাহীনতা, সংযোগহীনতা ইত্যাদি

মওজু (জাল)

মিথ্যা হাদীস, যা রাসূলের নামে বানানো


মুহাদ্দিসগণ কীভাবে যাচাই করেছেন?

হাদীস সংকলনকারীরা যেমন ইমাম বুখারীমুসলিমআবু দাউদতিরমিযী ইত্যাদি, কড়াভাবে নিচের বিষয়গুলো যাচাই করতেন:

  • ইসনাদ (সনদ): কে কে হাদীসটি বর্ণনা করেছে এবং তাদের মাঝে সংযোগ আছে কিনা।
  • রাবি (বর্ণনাকারী): তাদের চরিত্র, স্মরণশক্তি, গ্রহণযোগ্যতা।
  • মতন (মুল বক্তব্য): কুরআন বা নির্ভরযোগ্য হাদীসের সঙ্গে সাংঘর্ষিক কিনা।

উদাহরণ:

ইমাম বুখারী বলেন:

“আমি শুধু তখনই হাদীস লিপিবদ্ধ করতাম, যখন গোসল করে দুই রাকাত নামাজ পড়তাম এবং নিশ্চিত হতাম যে এটি সহীহ।”
(সূত্রতার তারীখ  অন্যান্য জীবনীগ্রন্থ)


হাদীস অস্বীকারকারীদের জন্য সতর্কতা

রাসূল (ﷺ) বলেছেন:

যে ব্যক্তি মিথ্যা বললো আমার নামেসে যেন তার স্থান জাহান্নামে নিশ্চিত করে নেয়।
সহীহ বুখারী  মুসলিম

এ থেকে বোঝা যায়, রাসূলের নামে হাদীস বানানো যেমন জঘন্য পাপ, তেমনি সহীহ হাদীস অস্বীকার করাও ভয়ংকর।


মুসলমানদের মাঝে সর্বসম্মত গ্রহণযোগ্যতা

হাদীস যুগ যুগ ধরে:

  • ইসলামি আইন (ফিকাহ) নির্ধারণে
  • আখলাক  চরিত্র গঠনে
  • ইবাদাতের নিয়ম-নীতি ঠিক করতে মূল উৎস হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। কোনো একটি হাদীসকে সহীহ বলার মানে সেটি যুক্তিপূর্ণ ও ইসলামী শাস্ত্র মতে স্বীকৃত।


হাদীস হলো এক বিজ্ঞানসম্মত ও নির্ভরযোগ্যভাবে সংরক্ষিত ধর্মীয় তথ্যভাণ্ডার। আলিমগণ শত শত বছর ধরে গবেষণা, যাচাই ও বিশ্লেষণের মাধ্যমে বিশুদ্ধ হাদীস আলাদা করেছেন। তাই, হাদীসের বিশ্বাসযোগ্যতা একটি বাস্তবতা, অন্ধবিশ্বাস নয়।