180

"আল্লাহ আছেন কি? — কোরআন ও হাদীসের আলোকে বিশ্লেষণ"



আল্লাহর অস্তিত্ব ইসলাম ধর্মের মৌলিক ভিত্তি। মুসলমানদের বিশ্বাস, এই বিশ্বজগতের স্রষ্টা, পালনকর্তা ও নিয়ন্ত্রক একজনই — তিনি আল্লাহ। কোরআন ও হাদীসে আল্লাহর অস্তিত্ব, গুণাবলী ও তাঁর প্রতি ঈমান আনার গুরুত্ব বারবার আলোচনা করা হয়েছে।


১. আল্লাহর অস্তিত্বের প্রমাণ – কোরআনের আলোকে

(ক) সৃষ্টি জগতের যুক্তি

سَنُرِيهِمْ آيَاتِنَا فِي الْآفَاقِ وَفِي أَنفُسِهِمْ حَتَّىٰ يَتَبَيَّنَ لَهُمْ أَنَّهُ الْحَقُّ
“আমি তাদেরকে আমার নিদর্শনসমূহ বিশ্বজগতে এবং তাদের নিজেদের মধ্যেও দেখাবো, যতক্ষণ না তাদের কাছে প্রতীয়মান হয় যে, এটাই সত্য।”
সূরা ফুসসিলাত, আয়াত ৫৩

এই আয়াতে আল্লাহ জানিয়ে দিয়েছেন যে, সৃষ্টি জগতের মধ্যে এবং মানুষের নিজের মধ্যেই রয়েছে আল্লাহর অস্তিত্বের প্রমাণ।


(খ) সৃষ্টির সূচনা ও উদ্দেশ্য

أَمْ خُلِقُوا مِنْ غَيْرِ شَيْءٍ أَمْ هُمُ الْخَالِقُونَ
“তারা কি কোন কিছু ছাড়াই সৃষ্টি হয়েছে? না কি তারা নিজেরাই স্রষ্টা?”
সূরা আত-তূর, আয়াত ৩৫

এখানে প্রশ্নাকারে যুক্তি তুলে ধরা হয়েছে— যদি তারা নিজেরাই সৃষ্টিকর্তা না হয়, তাহলে অবশ্যই তাদের কোনো স্রষ্টা আছেন।


(গ) তাওহীদের ঘোষণা

قُلْ هُوَ اللَّهُ أَحَدٌ، اللَّهُ الصَّمَدُ، لَمْ يَلِدْ وَلَمْ يُولَدْ، وَلَمْ يَكُن لَّهُ كُفُوًا أَحَدٌ
“বলুন, তিনিই আল্লাহ, একমাত্র।
আল্লাহ অমুখাপেক্ষী।
তিনি কাউকে জন্ম দেননি, আর তাঁকেও জন্ম দেওয়া হয়নি।
এবং তাঁর কোনো সমকক্ষ নেই।”
সূরা ইখলাস, আয়াত ১-৪

এই সূরাটি আল্লাহর অস্তিত্ব, একত্ব এবং স্বতন্ত্রতার সবচেয়ে শক্তিশালী ঘোষণা।


২. আল্লাহর অস্তিত্বের প্রমাণ – হাদীসের আলোকে

(ক) জিবরাঈল (আঃ) এর হাদীস

“...ঈমান কী? রাসূল (সঃ) বললেন: ‘তুমি আল্লাহ, তাঁর ফেরেশতাগণ, তাঁর কিতাবসমূহ, রাসূলগণ, কিয়ামত দিবস ও তাকদিরে বিশ্বাস রাখো — ভাল বা মন্দ যা কিছু ঘটে।’”
সহীহ মুসলিম: হাদীস ৮

এই হাদীসে ঈমানের প্রথম শর্তই হল আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস রাখা।


(খ) মুসান্নাফ ইবনে আবি শায়বা

রাসূল (সঃ) বলতেন: "আল্লাহুম্মা, অন্তরগুলো তোমার হাতের মধ্যে, তুমি যাকে ইচ্ছা সোজা পথে রাখো।"
মুসান্নাফ ইবনে আবি শায়বা: ৩৭৪৪৬

এখানেও দেখা যায় যে, মহানবী (সঃ) প্রতিনিয়ত আল্লাহর সাথে সম্পর্ক স্থাপন করতেন, যা আল্লাহর অস্তিত্ব ও তাঁর প্রতি নির্ভরশীলতার স্পষ্ট প্রমাণ।


৩. ইসলামী চিন্তাবিদদের যুক্তি

(ক) ইমাম আবু হানিফা (রহ.)

তিনি একবার একজন নাস্তিকের সাথে বিতর্কে বলেন:

“একটি জাহাজ সমুদ্রের মধ্যে নিজেরাই চলছে, পণ্য ওঠাচ্ছে ও নামাচ্ছে— এমন কথা কেউ বিশ্বাস করে না। তাহলে বিশাল এই সৃষ্টি জগত কি নিজে নিজেই চলছে?”


(খ) ইমাম গাজ্জালি (রহ.)

তিনি বলেন:

“মানব হৃদয়ে যে ঈমানের আলো দেখা যায়, সেটিই আল্লাহর অস্তিত্বের সবচেয়ে বড় প্রমাণ।”


৪. বিজ্ঞান ও ফিতরাত (স্বভাব)

কোনো কিছুই নিজে নিজে সৃষ্টি হয় না — এটি বিজ্ঞান ও যৌক্তিক চিন্তার মৌলিক নিয়ম। প্রতিটি সৃষ্টির পেছনে একজন স্রষ্টা প্রয়োজন, এবং ইসলাম সেই স্রষ্টাকে "আল্লাহ" বলে চিহ্নিত করেছে।


আল্লাহর অস্তিত্ব শুধুমাত্র কোরআন ও হাদীসে ঘোষিত বিশ্বাস নয়, বরং তা মানব ফিতরাত, যুক্তি এবং পরিবেশ-প্রকৃতির মাধ্যমে বারবার প্রতিফলিত হয়। ইসলাম বিশ্বাস করে, আল্লাহর অস্তিত্বে ঈমান আনা মানবজীবনের মূল চাবিকাঠি।