180

নবী  রাসূলদের অস্বীকার

নবী  রাসূলদের অস্বীকার - ইসলামি দৃষ্টিভঙ্গি

ইসলামের মূল বিশ্বাস অনুযায়ী, নবী ও রাসূলরা আল্লাহর পক্ষ থেকে মানবজাতিকে সঠিক পথ দেখানোর জন্য পাঠানো হয়। ইসলাম বিশ্বাস করে যে, আল্লাহ সময়-সর্বদা তাঁর বান্দাদের সঠিক নির্দেশনা দেওয়ার জন্য বিভিন্ন সময়ে ও স্থানে নবী এবং রাসূল প্রেরণ করেছেন। নবী ও রাসূলদের প্রতি অস্বীকার বা তাদের অবমাননা ইসলামের মৌলিক শিক্ষা ও বিশ্বাসের বিরোধী। এই অস্বীকৃতির পরিণতি আল্লাহর ন্যায়ের বিচারের বিরুদ্ধে যায় এবং গুরুতর ধর্মীয় অপরাধ হিসেবে গণ্য হয়।


নবী  রাসূলদের ভূমিকা:

১. নবী (Prophet)  রাসূল (Messenger):

  • নবী: নবী হচ্ছেন সেই ব্যক্তিকে, যাকে আল্লাহ তাঁর থেকে আগের ধর্মের কথা বা আযাবের কথা জানাতে পাঠান। নবীরা সাধারণত পূর্ববর্তী কিতাবের অনুসরণকারীদের জন্যই প্রেরিত হন। তাঁদেরকে নতুন কোনো কিতাব বা শরি'আত দেওয়া হয় না, তবে তাদের জীবন এবং উপদেশের মাধ্যমে মানুষের দিকনির্দেশনা দেওয়া হয়।
  • রাসূল: রাসূল হচ্ছেন সেই নবী যাকে আল্লাহ একটি নতুন কিতাব এবং নতুন শরি'আত (ধর্মীয় আইন) প্রদান করেন। তাদের দায়িত্ব হল নতুন কিতাব ও শরি'আত প্রচার করা এবং মানবজাতিকে তা অনুসরণ করতে আহ্বান করা।


ইসলামে নবী  রাসূলদের গুরুত্ব:

  • ইসলামে নবী ও রাসূলদের প্রতি ঈমান আনা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কোরআনে স্পষ্ট বলা হয়েছে:
    • আল্লাহর রাসূলদের মধ্যে কোনো পার্থক্য করা হবে না। (কোরআন 2:285)
    • আল্লাহ তায়ালা তাঁদের মধ্যে যাদের ইচ্ছে করেছেনতাদেরকে রাসূল হিসেবে নির্বাচন করেছেন। (কোরআন 33:40)

অর্থাৎ, নবী ও রাসূলদের প্রতি বিশ্বাস করা ইসলামিক বিশ্বাসের অবিচ্ছেদ্য অংশ। যদি কোনো ব্যক্তি নবী বা রাসূলদের অস্বীকার করে, তাহলে সে ইসলাম থেকে বেরিয়ে যায়।


নবী  রাসূলদের প্রতি অস্বীকারের দোষ:

১. অবিশ্বাস এবং অস্বীকৃতি: নবী ও রাসূলদের অস্বীকার ইসলামের অন্যতম বড় অপরাধ হিসেবে গণ্য হয়। কোরআন ও হাদিসে এমন অস্বীকৃতির জন্য কঠোর শাস্তির সতর্কতা রয়েছে। আল্লাহ কোরআনে বলছেন:

  • যারা আল্লাহ এবং তাঁর রাসূলকে অস্বীকার করবেতাদের জন্য দোজখের আগুন রয়েছে। (কোরআন 48:13)

ইসলাম বিশ্বাস করে যে, নবী ও রাসূলদের উপর ঈমান আনা অপরিহার্য। তাদের অস্বীকার করলে, সেটা এক ধরনের আল্লাহ ও তার রাসূলের প্রতি অবাধ্যতা এবং ঈমানহীনতা।

  1. ইসলামের ইতিহাসে নবী  রাসূলদের অবমাননা: ইসলামের ইতিহাসে অনেক অমুসলিম এবং কিছু মুসলিম সম্প্রদায় নবী বা রাসূলদের অবমাননা করেছে, এবং তাদের বিরুদ্ধে নানা ধরণের মিথ্যা অভিযোগও উঠেছে। তাদের এই অস্বীকার বা অবমাননা সৃষ্টিকর্তার বিধান অনুযায়ী পাপ এবং নিন্দনীয়।

উদাহরণস্বরূপ, কোরআনে অনেকবার নবী হযরত মুসা (আ.) এবং নবী হযরত ঈসা (আ.) সহ অন্যান্য নবীদের প্রতি অবজ্ঞা করা হয়েছে, এবং তাদের প্রতি বিদ্বেষমূলক আচরণ করা হয়েছে:

    • কিছু ব্যক্তি বলেছিল, 'হে ঈসাতুমি তো আল্লাহর রাসূল।কিন্তু তারা কেবলই তাদের মনের ক্ষোভ এবং বিদ্বেষ প্রকাশ করেছে। (কোরআন 5:110)


নবী  রাসূলদের প্রতি ঈমানের গুরুত্ব:

ইসলামের দৃষ্টিতে, নবী ও রাসূলদের প্রতি ঈমান না থাকলে, মানুষের ঈমান সম্পূর্ণ হয় না। মুসলিমদের জন্য তারা আল্লাহর প্রতিনিধিত্ব করেন এবং আল্লাহর পক্ষ থেকে বিশ্ববাসীকে সঠিক পথ প্রদর্শন করেন। আল্লাহ বলেন:

  • আমরা তোমাদের কাছে আগের জাতির কথা বলেছিআর তাদের নবীগণও তোমাদের মতোই তোমাদের সঙ্গী ছিলেন। (কোরআন 7:44)

এই আয়াতে, আল্লাহ জানাচ্ছেন যে নবী ও রাসূলরা মানব জাতিকে সঠিক পথে পরিচালিত করার জন্য তাঁর পক্ষ থেকে প্রেরিত হয়েছিলেন।


নবী  রাসূলদের অস্বীকারের পরিণতি:

যারা নবী ও রাসূলদের অস্বীকার করে, তাদের শাস্তি নিঃসন্দেহে কঠিন। কোরআনে আল্লাহ বলেন:

  • যারা রাসূলদের অস্বীকার করেতাদের জন্য রয়েছে ভীষণ শাস্তি। (কোরআন 4:56)
  • আল্লাহ  তার রাসূলের প্রতি যারা বিশ্বাস রাখে নাতাদের জন্য আল্লাহ শাস্তি প্রস্তুত রেখেছেন। (কোরআন 33:57)

এছাড়া, হাদিসে নবী (সা.) বলেছেন:

  • যে ব্যক্তি আল্লাহর প্রতি ঈমান আনেসে কখনো নবী বা রাসূলদের অস্বীকার করবে না। (সহীহ মুসলিম)


নবী ও রাসূলদের অস্বীকার ইসলামিক বিশ্বাসের একটি বড় পাপ এবং এর পরিণতি অত্যন্ত ভয়াবহ। ইসলাম একটি পূর্ণাঙ্গ জীবনব্যবস্থা যেখানে আল্লাহর পক্ষে প্রেরিত নবী ও রাসূলদের শিক্ষার প্রতি ঈমান রাখা অপরিহার্য। তাদের অস্বীকার করলে ইসলামের মৌলিক বিশ্বাসের সঙ্গে বিরোধ সৃষ্টি হয় এবং একে অবিশ্বাস করা আল্লাহর নির্দেশের বিরুদ্ধে যাবে। ইসলামে নবী ও রাসূলদের প্রতি শ্রদ্ধা, বিশ্বাস এবং তাদের শিক্ষা অনুসরণ করাই মুসলিম জীবনের মৌলিক দিক।