180

নাস্তিকদের প্রশ্ন  ইসলামী উত্তর


নাস্তিকরা বিভিন্ন ধরনের প্রশ্ন তুলে থাকে, যা মূলত ধর্ম, স্রষ্টা, আধ্যাত্মিকতা, এবং ঈশ্বরের অস্তিত্ব নিয়ে সংশয় ও সন্দেহ প্রকাশ করে। ইসলামের আলোকে এসব প্রশ্নের জবাব দেওয়া সম্ভব, তবে এখানে বেশ কিছু সাধারণ নাস্তিকের প্রশ্ন এবং ইসলামী দৃষ্টিকোণ থেকে উত্তর তুলে ধরা হলো:

প্রশ্নআল্লাহ্ কোথায় আছেন?

নাস্তিকদের মধ্যে একদল এই প্রশ্নটি তোলেন, "যদি আল্লাহ্ থাকেন, তাহলে তিনি কোথায় আছেন?"

ইসলামী উত্তর: ইসলামে আল্লাহ্ সমস্ত জায়গায় আছেন, তবে তাঁর অস্তিত্ব স্থান ও সময়ের বাইরে। আল্লাহ্ বলেন:

  • "তিনি আকাশমন্ডল এবং পৃথিবীকে সৃষ্টি করেছেন।" (কোরআন 2:164) এখানে "কোথায়" এর অর্থ আমাদের ধারণা অনুযায়ী নয়, আল্লাহ্ এর অপার শক্তি ও অস্তিত্ব স্থান-কাল ছাড়াই মহাশক্তিশালী। "আল্লাহ কোথায় আছেন?" এমন প্রশ্ন কেবল মানবিক সীমাবদ্ধতার মধ্যে সীমাবদ্ধ, যেখানে আল্লাহর অস্তিত্বের পরিধি অমর, অস্থির এবং অদ্বিতীয়।

প্রশ্নআল্লাহ্ যদি সবকিছু জানেনতবে আমাদের পরীক্ষা কেন?

নাস্তিকরা অনেক সময় প্রশ্ন করেন, "যদি আল্লাহ্ সবকিছু জানেন, তবে আমাদের পরীক্ষা কেন?"

ইসলামী উত্তর: ইসলামে বলা হয়েছে যে, আল্লাহ্ সকল কিছু জানেন এবং ভবিষ্যতেও তিনি সবকিছু জানেন। কিন্তু তাঁর পরীক্ষা বা পরিশ্রমের ব্যবস্থা মানুষকে সঠিক পথের দিকে পরিচালিত করার জন্য। মানবতার পরীক্ষায় আল্লাহ্ মানুষকে তাঁর ইচ্ছার প্রতি অবিচল থাকতে প্রেরণা দেন।

  • "যে ব্যক্তি ঈমান আনে এবং সৎকর্ম করে, আমি তাকে জান্নাতে প্রবেশ করাবো।" (কোরআন 16:97) অর্থাৎ, এখানে পরীক্ষা মানবিক উন্নতির জন্য এবং মানুষের জন্য সৎপথের অনুসরণে সহায়ক।

প্রশ্নধর্মীয় যুদ্ধ কি সঠিক?

নাস্তিকরা অনেক সময় বলেন, "ধর্মের কারণে যুদ্ধ ও সহিংসতা ঘটছে, তাই ধর্মের কোনো ভালো উদ্দেশ্য নেই।"

ইসলামী উত্তর: ইসলাম শান্তির ধর্ম, এবং কোরআন ও হাদিসে যুদ্ধের কোনো আদেশ দেয়া হয়নি যদি না সেটা আত্মরক্ষা ও ধর্মের সুরক্ষা হয়।

  • "যুদ্ধ নিষিদ্ধ করা হয়নি, তবে আত্মরক্ষার জন্য একে বৈধ করা হয়েছে।" (কোরআন 2:190) ইসলামে শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্যই যুদ্ধ করা হয়, অন্যথায় যুদ্ধ বা সহিংসতা শাস্তিযোগ্য।

প্রশ্নআল্লাহ্ যদি দয়ালু হনতবে মানুষ কেন দুঃখ-যন্ত্রণায় ভোগে?

নাস্তিকরা প্রশ্ন করেন, "আল্লাহ্ যদি দয়ালু হন, তবে কেন পৃথিবীতে এত দুঃখ-কষ্ট, যুদ্ধ ও দুর্ভোগ রয়েছে?"

ইসলামী উত্তর: ইসলামে বলা হয়, পৃথিবী একটি পরীক্ষা এবং এই পরীক্ষা জীবনের সকল দুঃখ-কষ্ট দিয়ে মানুষের ঈমান ও ধৈর্য যাচাই করা হয়। আল্লাহ্ দয়ালু, তবে তিনি মানুষকে স্বাধীন ইচ্ছাশক্তি দিয়েছেন, যাতে তারা নিজেদের কাজের জন্য দায়ী হয়।

  • "আমি তোমাদের পরীক্ষা করি, যেমন তোমরা পরীক্ষিত হবে – তোমরা ধনী, দুঃখী, সুখী, দুঃখী ইত্যাদির মধ্য দিয়ে।" (কোরআন 2:155) এখানে পৃথিবীর যন্ত্রণা ও দুঃখ কেবল প্রমাণ করে যে, আল্লাহর ইচ্ছা মানুষের কঠিন পরিশ্রম, সহিষ্ণুতা এবং নৈতিকতার পরীক্ষা।

প্রশ্নধর্মীয় মতবাদ কি বিজ্ঞান অনুযায়ী সঠিক?

নাস্তিকরা অনেক সময় ধর্মীয় মতবাদগুলোকে বিজ্ঞানের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ না পেয়ে প্রশ্ন করেন।

ইসলামী উত্তর: ইসলাম কখনও বিজ্ঞানের বিরোধিতা করে না, বরং কোরআনে বিজ্ঞানের প্রতি উৎসাহিত করা হয়েছে। অনেক বৈজ্ঞানিক আবিষ্কার কোরআনের আয়াতের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ। আল্লাহ্ বলেন:

  • "আমি আকাশমন্ডল এবং পৃথিবী সৃষ্টি করেছি সঠিকভাবে, আর আকাশের সৃষ্টি সম্পর্কে তাদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে..." (কোরআন 51:47) ইসলাম বিজ্ঞান ও যুক্তির প্রতি খোলামেলা এবং কোনো বৈজ্ঞানিক আবিষ্কার যদি কোরআনের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ হয়, তবে এটি একটি প্রমাণ যে ধর্ম এবং বিজ্ঞান একে অপরের পরিপূরক।

প্রশ্নধর্ম কেনবিজ্ঞান সবকিছু ব্যাখ্যা করতে পারে না?

নাস্তিকদের মধ্যে অনেকেই বিশ্বাস করেন যে বিজ্ঞানই সবকিছু ব্যাখ্যা করতে পারে এবং ধর্মের প্রয়োজন নেই।

ইসলামী উত্তর: ইসলাম জানায় যে, বিজ্ঞান এবং ধর্ম দুটোই একে অপরের পরিপূরক। বিজ্ঞান প্রাকৃতিক পৃথিবী ও জীবনের অনেক দিক ব্যাখ্যা করতে পারে, তবে ধর্ম মানুষের আধ্যাত্মিকতা, মূল্যবোধ, এবং জীবনের উদ্দেশ্য সম্পর্কে ব্যাখ্যা দেয়।

  • "তোমরা যে পৃথিবী এবং আকাশের মধ্যে যা কিছু দেখো, তা আমাদের সৃষ্টির নিদর্শন।" (কোরআন 51:20-21) এবং, "আমরা আকাশমন্ডল ও পৃথিবীকে সৃষ্টি করেছি যথাযথভাবে..." (কোরআন 55:7)

বিজ্ঞান আধ্যাত্মিক উদ্দেশ্য বা স্রষ্টার পরিকল্পনার ব্যাখ্যা দিতে সক্ষম নয়। এই কারণে ধর্ম এবং বিজ্ঞান একে অপরকে সমর্থন করে।

প্রশ্নধর্মীয় বিশ্বাস কি অন্ধবিশ্বাস?

নাস্তিকরা প্রশ্ন করেন, "ধর্মীয় বিশ্বাস কি অন্ধবিশ্বাস, যেখানে কোনো প্রমাণ নেই?"

ইসলামী উত্তর: ইসলামে বিশ্বাস অন্ধবিশ্বাস নয়, বরং যুক্তির, প্রমাণের এবং স্বচ্ছতা ভিত্তিক। কোরআন বারবার মানুষকে চিন্তা-ভাবনা করতে, প্রমাণ খুঁজতে এবং বাস্তবতা নিয়ে অনুসন্ধান করতে উৎসাহিত করেছে। আল্লাহ্ বলেন:

  • "এটি একটি পাঠ, যে পৃথিবী এবং আকাশের মধ্যে যা কিছু আছে তা দেখুন এবং চিন্তা করুন।" (কোরআন 47:24) এখানে ধর্মের প্রতি বিশ্বাসের ভিত্তি হলো প্রমাণ এবং যুক্তি, যা মানুষের হৃদয়ে স্থির থাকে।

নাস্তিকদের বিভিন্ন প্রশ্ন এবং ইসলামের প্রতিক্রিয়া গুলি এই বুঝায় যে, ইসলাম যুক্তি, প্রমাণ এবং দর্শনীয় দৃষ্টিকোণ থেকে মানুষের প্রশ্নের উত্তর দিতে প্রস্তুত। স্রষ্টার অস্তিত্ব, মানবতার উদ্দেশ্য, এবং বিশ্বের সৃষ্টি—এসব বিষয় গুলির মধ্যে রয়েছে গভীর প্রজ্ঞা, যার মধ্যে ইসলামের উত্তর সঠিকভাবে যুক্তি এবং ঈশ্বরের দয়ার মধ্যে প্রতিষ্ঠিত।