180

সৃষ্টি  মহাবিশ্ব


সৃষ্টি  মহাবিশ্বইসলামের দৃষ্টিকোণ

ইসলামে সৃষ্টি ও মহাবিশ্বের উৎপত্তি এবং এর উদ্দেশ্য সম্পর্কে স্পষ্টভাবে আলোচনা করা হয়েছে। কোরআন এবং হাদিসের আলোকে সৃষ্টি এবং মহাবিশ্বের ধারণা আল্লাহ্‌র ক্ষমতা, সৃষ্টি এবং তার অবিচ্ছেদ্য নীতি সম্পর্কে গভীর শিক্ষা দেয়।

মহাবিশ্বের সৃষ্টি

ইসলামে মহাবিশ্বের সৃষ্টি আল্লাহ্‌র দ্বারা এক সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা অনুযায়ী ঘটেছে। কোরআনে আল্লাহ্‌র সৃষ্টির ক্ষমতা সম্পর্কে বলা হয়েছে:

  • "আল্লাহ আসমান  পৃথিবী সৃষ্টি করেছেন..." (কোরআন 2:164)
  • "তিনিই আকাশমন্ডল  পৃথিবী সৃষ্টি করেছেন ছয় দিনে এবং তারপর আরশে অভিজ্ঞান করেছেন..." (কোরআন 7:54)

কোরআনের এই আয়াতগুলি মহাবিশ্বের সৃষ্টি সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা প্রদান করে, যেখানে পৃথিবী এবং আকাশের সৃষ্টি আল্লাহ্‌র এক মহৎ পরিকল্পনার অংশ। এখানে "ছয় দিন" শব্দটি সৃষ্টি প্রক্রিয়ার একটি নির্দিষ্ট সময়কাল হিসেবে বোঝানো হয়েছে। ইসলামে এই ছয় দিনকে কাল্পনিকভাবে না দেখে বরং আল্লাহ্‌র অপরিসীম ক্ষমতা ও সৃষ্টির নৈকট্য হিসেবে বিবেচনা করা উচিত।

মহাবিশ্বের উদ্দেশ্য

ইসলামের দৃষ্টিতে, মহাবিশ্ব এবং এর মধ্যে সমস্ত সৃষ্টির একটি বিশেষ উদ্দেশ্য রয়েছে। আল্লাহ্ সৃষ্টির মাধ্যমে মানুষ এবং অন্যান্য জীবের জন্য জীবনের উপযোগিতা সৃষ্টি করেছেন, যাতে তারা আল্লাহ্‌র ইবাদত করতে পারে এবং তাঁর দিকে ফিরে আসতে পারে। কোরআনে আল্লাহ্ বলেন:

  • "আমি সৃষ্টি করেছি আকাশ  পৃথিবীকে সত্যের সঙ্গে।" (কোরআন 16:3)

মহাবিশ্বের সৃষ্টি শুধুমাত্র এক ধরনের পরীক্ষা, যা মানুষের উদ্দেশ্য উপলব্ধি ও নিজেদের ঈমান এবং সৎকর্মে পরীক্ষা করার জন্য আল্লাহ্ নির্ধারণ করেছেন। মানুষকে তার জীবনের উদ্দেশ্য উপলব্ধি করতে সাহায্য করার জন্য এই বিশ্ব সৃষ্টি হয়েছে। কোরআন বলে:

  • "তোমরা যে আকাশমন্ডল এবং পৃথিবী সৃষ্টি করেছিতা তোমাদের জন্য নিদর্শন।" (কোরআন 51:20-21)

এখানে আল্লাহ্ মানুষের জন্য আকাশ ও পৃথিবীকে তাঁর অস্তিত্ব ও সৃষ্টির নিদর্শন হিসেবে পাঠিয়েছেন।

মহাবিশ্বের সৃষ্টির সঠিকতা  নিয়ম

ইসলামে মহাবিশ্বের সৃষ্টি একটি সুনির্দিষ্ট নিয়মের অধীনে হয়েছে। কোরআনে বলা হয়েছে:

  • "তিনিই আকাশমন্ডল এবং পৃথিবীকে সঠিকভাবে সৃষ্টি করেছেন।" (কোরআন 55:7)

এখানে বলা হয়েছে যে, আল্লাহ্‌র সৃষ্টির মধ্যে কোনো ত্রুটি নেই, এবং সবকিছু সুদৃঢ় এবং সঠিকভাবে স্থাপিত। মহাবিশ্বের প্রতিটি পদার্থ ও শক্তির মধ্যে রয়েছে সুনির্দিষ্ট নিয়ম। কোরআনে আরও বলা হয়েছে:

  • "তিনিই পৃথিবীকে তোমাদের জন্য শন্তি  শান্তির জায়গা বানিয়েছেন এবং আকাশমন্ডলকে সুন্দরভাবে সাজিয়েছেন।" (কোরআন 71:19-20)

মহাবিশ্বের বিস্তৃতি

ইসলামে মহাবিশ্বের বিস্তৃতির বিষয়ে আল্লাহ্‌র বিশেষ বর্ণনা রয়েছে। কোরআনে বলা হয়েছে:

  • "আকাশের বিস্তৃতি আমি করেছি এবং তা আমি সতর্কভাবে সাজিয়েছি।" (কোরআন 51:47)

বিজ্ঞানীরা আজকাল মহাবিশ্বের বিস্তৃতি সম্পর্কে আলোচনা করতে গিয়ে একই ধরনের চিন্তাভাবনা প্রকাশ করেন, যেখানে মহাবিশ্বের সীমাহীন বিস্তার ও শক্তি বোঝানো হয়। কোরআনেও মহাবিশ্বের বিস্তার এবং তার রহস্যের ওপর আল্লাহ্‌র সৃষ্টির কথা বলা হয়েছে, যা বিজ্ঞানী ও গবেষকদের কাছে প্রমাণিত হয়ে উঠছে।

সৃষ্টি এবং ঈশ্বরের শক্তি

ইসলামে মহাবিশ্বের সৃষ্টি থেকে আরও একটি শিক্ষা পাওয়া যায়, তা হলো আল্লাহ্‌র অসীম ক্ষমতা এবং তাঁর সৃষ্টির প্রতি কর্তৃত্ব। স্রষ্টার পক্ষ থেকে সবকিছু একটি নির্দিষ্ট উদ্দেশ্য ও পরিকল্পনা অনুযায়ী চলছে। কোরআন বলে:

  • "তিনি যা চান তা করতে পারেনযখন তিনি বলেন 'হয়!', তখন তা হয়ে যায়।" (কোরআন 36:82)

এটি আল্লাহ্‌র অপরিসীম শক্তির প্রতিফলন এবং সৃষ্টি ও প্রকৃতির নিরন্তর গতির জন্য আল্লাহ্‌র হাতে থাকা সর্বশেষ ক্ষমতা নির্দেশ করে।

মানুষ  মহাবিশ্বের সম্পর্ক

ইসলামে বলা হয়েছে, মানুষ এই পৃথিবীতে আল্লাহ্‌র প্রতিনিধি বা খলিফা। মানুষের কাজ হলো আল্লাহ্‌র ইবাদত করা এবং পৃথিবী ও মহাবিশ্বের সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত করা। আল্লাহ্ বলেন:

  • " পৃথিবীতে আমি তোমাদের জন্য একমাত্র খলিফা তৈরি করেছি..." (কোরআন 35:39)

মানুষের দায়িত্ব হচ্ছে পৃথিবীকে শান্তিপূর্ণ ও সঠিকভাবে পরিচালনা করা, যেমন মহাবিশ্বের সৃষ্টির উদ্দেশ্য ছিল এক জগতের সৃষ্টি করা যা মানুষ, অন্যান্য প্রাণী এবং প্রকৃতির মধ্যে একটি ভারসাম্য বজায় রাখবে।

ইসলামে মহাবিশ্বের সৃষ্টি এবং এর উদ্দেশ্য সম্পর্কে পরিষ্কারভাবে বলা হয়েছে যে, সৃষ্টির মধ্যে সৃজনশীলতা, নিয়ম, এবং আল্লাহ্‌র নিদর্শন রয়েছে। মানুষের উদ্দেশ্য হচ্ছে সৃষ্টির মাধ্যমে আল্লাহ্‌র মহিমা জানানো এবং তাঁর নির্দেশিত পথে চলা। সৃষ্টির প্রতিটি উপাদানই আল্লাহ্‌র এক অমোঘ পরিকল্পনার অংশ, যা মানবজাতিকে সঠিক পথের দিকে পরিচালিত করতে সাহায্য করে।