قُلْ هُوَ ٱللَّهُ أَحَدٌ ١ ٱللَّهُ ٱلصَّمَدُ ٢ لَمْ يَلِدْ وَلَمْ يُولَدْ ٣ وَلَمْ يَكُن لَّهُۥ كُفُوًا أَحَدٌ ٤
বলুন, “তিনি আল্লাহ, এক ও অদ্বিতীয়। আল্লাহ অমুখাপেক্ষী। তিনি কাউকে জন্ম দেননি এবং তাঁকেও জন্ম দেওয়া হয়নি। আর তাঁর সমতুল্য কেউ নেই।” (সূরা ইখলাস, আয়াত ১–৪)
بَدِيعُ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ ۖ أَنَّىٰ يَكُونُ لَهُ وَلَدٌ...
“তিনি আসমান ও যমীনের অনন্য স্রষ্টা। তাঁর সন্তান কিভাবে হতে পারে? অথচ তাঁর কোনো সঙ্গিনী নেই। আর তিনি সব কিছু সৃষ্টি করেছেন এবং তিনি প্রত্যেক বিষয়ের জ্ঞাত।”
(সূরা আল-আনআম, আয়াত ১০১)
إِنَّ فِي خَلْقِ ٱلسَّمَـٰوَٰتِ وَٱلْأَرْضِ...
“নিশ্চয়ই আকাশ ও পৃথিবীর সৃষ্টি, দিবা ও রাত্রির আবর্তনে জ্ঞানীদের জন্য রয়েছে নিদর্শন।
যারা দাঁড়িয়ে, বসে এবং শুয়ে আল্লাহকে স্মরণ করে এবং আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবীর সৃষ্টি সম্পর্কে চিন্তা করে বলে— ‘হে আমাদের প্রতিপালক! তুমি এগুলো অযথা সৃষ্টি করো নি। তুমি
পবিত্র! আমাদের রক্ষা করো জাহান্নামের আগুন থেকে।’” (সূরা আলে ইমরান, আয়াত ১৯০–১৯১)
اللَّهُ لَا إِلَـٰهَ إِلَّا هُوَ الْحَيُّ الْقَيُّومُ...
“আল্লাহ – তিনি ছাড়া কোনো ইলাহ (উপাস্য) নেই। তিনি চিরঞ্জীব, সব কিছুর ধারক ও সংরক্ষণকারী। তাঁকে তন্দ্রা এবং নিদ্রা স্পর্শ করে না। আসমান ও যমীনে যা কিছু আছে, সবই তাঁর। কে আছে যে তাঁর অনুমতি ছাড়া তাঁর কাছে সুপারিশ করতে পারে? তিনি জানেন যা কিছু তাদের সামনে ও তাদের পেছনে আছে। আর তারা কিছুই জানতে পারে না, যতটুকু তিনি ইচ্ছা করেন তা ছাড়া। তাঁর কুরসি (সিংহাসন) আসমান ও যমীনকে পরিব্যাপ্ত করে আছে। আর তা রক্ষা করা তাঁর পক্ষে কঠিন নয়। তিনি সর্বোচ্চ, মহান।” (সূরা বাকারা, আয়াত ২৫৫)
পৃথিবী, মহাবিশ্ব, জীবজগৎ—সবকিছুর মাঝে রয়েছে নিখুঁত নিয়ম ও গঠন। সূর্য নির্দিষ্ট দূরত্বে, বাতাসে প্রাণের ভারসাম্য, পানির রাসায়নিক বৈশিষ্ট্য—সবই একটি সর্বজ্ঞ, সর্বশক্তিমান স্রষ্টার নিদর্শন বহন করে।
মানুষের ভিতরে থাকা ন্যায়-অন্যায় বোধ, মায়া-মমতা, নৈতিক চিন্তা—এসব কেবল জৈবিক ক্রিয়া নয়। এগুলো স্রষ্টার দ্বারা প্রদত্ত আত্মিক দিক, যা আল্লাহর অস্তিত্বের এক অন্তর্নিহিত প্রমাণ।
রাত-দিনের পালাবদল, ঋতু পরিবর্তন, গাছপালা ও প্রাণীর জীবনচক্র—সব কিছু এক অসীম জ্ঞানের অধিকারী সত্ত্বার নিয়ন্ত্রণে। এ ভারসাম্য কাকতালীয় নয়, বরং আল্লাহর নিখুঁত সৃষ্টির নমুনা।
ইসলাম ধর্মের মূল বিষয় বা ভিত্তিসমূহকে সাধারণত "ইসলামের পাঁচ স্তম্ভ" বা "ইসলামের মূল ভিত্তি" বলা হয়। এগুলো মুসলিমদের জীবনধারার ভিত্তি এবং ঈমানের প্রকাশ।
ইসলামের মৌলিক বিশ্বাসসমূহকে বলা হয় "ঈমানের ছয়টি রুকন (মূলনীতি)"। এই ছয়টি বিষয়ে বিশ্বাস রাখা প্রত্যেক মুসলমানের জন্য আবশ্যক (ফরজ) :
১. আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস (إيمان بالله)
২. ফেরেশতাদের প্রতি বিশ্বাস (إيمان بالملائكة)
৩. আসমানী কিতাবসমূহের প্রতি বিশ্বাস (إيمان بالكتب السماوية)
৪. নবী ও রাসূলদের প্রতি বিশ্বাস (إيمان بالرسل)
৫. পরকাল ও হাশরের ময়দানের প্রতি বিশ্বাস (إيمان باليوم الآخر)
৬. তাকদির বা ভাগ্যের প্রতি বিশ্বাস (إيمان بالقدر)
কোরআন আল্লাহ্র পক্ষ থেকে নাজিলকৃত শেষ ও চূড়ান্ত গ্রন্থ, যা মানবজীবনের পূর্ণাঙ্গ দিকনির্দেশনা। হাদিস নবী মুহাম্মাদ (সা.)-এর কথা ও কাজ, যা কোরআনের ব্যাখ্যা ও বাস্তব প্রয়োগের রূপ।
সংশয় মানুষের মনে ধর্ম, স্রষ্টা বা বিশ্বাস নিয়ে উদ্ভূত প্রশ্ন, দ্বিধা বা বিভ্রান্তি—যা সচরাচর তথ্যের অভাব, ভুল ব্যাখ্যা বা নেতিবাচক প্রভাব থেকে সৃষ্টি হয়। জবাব হলো যুক্তিনির্ভর, কুরআন-সুন্নাহভিত্তিক ও বাস্তবসম্মত ব্যাখ্যা, যা সংশয় দূর করে ঈমানকে দৃঢ় করে। ইসলাম সংশয়ের প্রতি বিদ্বেষ নয়, বরং জ্ঞান ও প্রমাণের মাধ্যমে সন্তুষ্টিজনক জবাব দেয়—এটাই ইসলামের সৌন্দর্য।
ইসলাম কোনো অন্ধবিশ্বাস নয়—এটি বুদ্ধি, প্রমাণ ও গবেষণাভিত্তিক জীবনব্যবস্থা, যা জ্ঞানের প্রতি উদ্বুদ্ধ করে। বিজ্ঞান আবিষ্কার করে সৃষ্টি জগতের নিয়ম-কানুন, আর ইসলাম সেই স্রষ্টার কথা বলে যিনি এই নিয়ম সৃষ্টি করেছেন। ইসলাম পর্যবেক্ষণ, অনুসন্ধান ও যুক্তি ব্যবহারকে উৎসাহিত করে, যা একে বিজ্ঞানমনস্ক ধর্মে রূপ দেয়
নাস্তিকতা হলো এমন একটি দৃষ্টিভঙ্গি, যেখানে স্রষ্টা, ধর্ম বা পরকাল বিশ্বাস করা হয় না। এটি মূলত যুক্তির অভাব, ভুল ধারণা, বা ধর্মীয় অপব্যাখ্যার ফলেও জন্ম নিতে পারে। ইসলাম এসব সংশয়কে উপেক্ষা করে না—বরং প্রমাণ, যুক্তি ও কুরআন-হাদিসভিত্তিক ব্যাখ্যার মাধ্যমে সন্তোষজনক উত্তর দেয়।
যুক্তি হলো সঠিক চিন্তা, প্রমাণ ও যুক্তির মাধ্যমে সত্য অনুসন্ধান। ইসলামে যুক্তি ও যুক্তিবাদী চিন্তা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কোরআন ও হাদিসে বারবার বিবেক এবং বুদ্ধির ব্যবহার করার ওপর জোর দেওয়া হয়েছে। দর্শন হলো গভীর চিন্তা এবং বিশ্ব সম্পর্কে প্রশ্ন করা। ইসলাম বিশ্ব, জীবন এবং মানবতার উদ্দেশ্য নিয়ে প্রশ্ন করার এবং সেগুলোর উত্তর খোঁজার স্বাধীনতা দেয়। তবে, দর্শন ও যুক্তি সর্বদা আল্লাহর অস্তিত্ব, তাওহীদ এবং আখিরাত এর সত্যতার প্রতি কেন্দ্রীভূত হতে হবে।
নাস্তিকতা হচ্ছে এমন একটি দৃষ্টিকোণ, যেখানে স্রষ্টা বা ধর্মের অস্তিত্ব অস্বীকার করা হয়। ইসলাম এটি চ্যালেঞ্জ করে বিশ্বাস এবং যুক্তির ভিত্তিতে সত্য প্রমাণ করার চেষ্টা করে। ইসলাম নাস্তিকতার সংশয়কে যুক্তি, প্রমাণ এবং প্রকৃতির নির্দিষ্ট নিদর্শনের মাধ্যমে চ্যালেঞ্জ জানায় এবং স্রষ্টার অস্তিত্বের সত্যতা প্রতিষ্ঠা করে।
ইসলামে নবী ও রাসূল উভয়েই আল্লাহর নির্বাচিত প্রতিনিধি, নবী আল্লাহর কাছ থেকে নির্দেশনা প্রাপ্ত ব্যক্তি, যারা পূর্ববর্তী ধর্মের অনুসরণ করেন এবং নতুন আইন আনেন না। তারা তাদের সম্প্রদায়ের জন্য উপদেশ দেন। রাসূল নতুন ধর্ম ও বিধান নিয়ে এসেছেন এবং শুধুমাত্র তাদের সম্প্রদায়ের জন্য নয়, বরং সারা পৃথিবীর জন্য নতুন নিয়ম এবং বিধান প্রদান করেন।
দার্শনিক ও বৈজ্ঞানিক যুক্তির ভিত্তিতে অনেকেই বিশ্বাস করেন, আল্লাহর অস্তিত্ব নিছক বিশ্বাস নয়, বরং যুক্তিসম্মত উপলব্ধি।
নাস্তিক্যবাদীর যুক্তিগুলোর মূল ভিত্তি—ধর্মের ভুল ব্যাখ্যা, আবেগের অতিরঞ্জন এবং ইতিহাসের বিচ্ছিন্ন ঘটনা। ইসলামের আলোকে যুক্তি ও জ্ঞানের মাধ্যমে এসব প্রশ্নের পরিপূর্ণ ও শান্তিপূর্ণ জবাব দেওয়া হলো।
কোরআন-সুন্নাহর আলোকে তাওহিদ, রিসালাত ও আখিরাতসহ গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের যৌক্তিক উত্তর প্রদানের কৌশল, নাস্তিকদের নিকটে ইসলামের বার্তা শান্তিপূর্ণ ও যুক্তিসম্মতভাবে পৌঁছানো ও তাদের ভ্রান্ত ধারণার বিরুদ্ধে যুক্তিভিত্তিক বিতর্ক ও প্রশ্নোত্তরের দক্ষতা অর্জন।
ইসলাম একমাত্র ধর্ম যা কোরআনের মাধ্যমে বিজ্ঞান, ইতিহাস ও নৈতিকতা—তিনটি স্তরে পরীক্ষিত ও প্রমাণিত হয়েছে। এতে রয়েছে বিকৃতিহীন গ্রন্থ, বাস্তবসম্মত বিধান ও সর্বজনীন শিক্ষা।
হ্যাঁ, কোরআন এমন বহু তথ্য দিয়েছে যা ১৪০০ বছর পরে বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমাণিত হয়েছে। এটি আরব সাহিত্যের শ্রেষ্ঠত্বেও অতুলনীয়, যা মানুষের পক্ষ থেকে রচনা অসম্ভব।
"ইসলাম" শব্দটির অর্থই "শান্তি ও আত্মসমর্পণ"। প্রকৃত ইসলাম সহিংসতা নয়, বরং ন্যায়, সহনশীলতা ও মানবকল্যাণে বিশ্বাস করে।
ইসলাম তাত্বিক যুুক্তি, প্রায়োগিক প্রমাণ ও বিশ্বাস —এই তিন পদ্ধতিতে জবাব দেয়। তাওহিদ, সৃষ্টি, উদ্দেশ্য ও নৈতিকতা সম্পর্কে কোরআনের উত্তরগুলো যুক্তিনির্ভর ও হৃদয়স্পর্শী।