180

সংশয়

"যেখানে সংশয়, সেখানেই ইসলাম"

কোরআন, হাদীস, যুক্তি, প্রমাণ ও গ্রহনযোগ্য আলোচনার মাধ্যমে হোক সকল সংশয়ের অবসান।

"Stop the War, Save Humanity –
Free Palestine!"

নবী মুহাম্মদ (সা.) ইতিহাসের সর্বশ্রেষ্ঠ মানুষ কেন?

 

সৃষ্টির সূক্ষ্মতা

পৃথিবী, মহাবিশ্ব, জীবজগৎ—সবকিছুর মাঝে রয়েছে নিখুঁত নিয়ম ও গঠন। সূর্য নির্দিষ্ট দূরত্বে, বাতাসে প্রাণের ভারসাম্য, পানির রাসায়নিক বৈশিষ্ট্য—সবই একটি সর্বজ্ঞ, সর্বশক্তিমান স্রষ্টার নিদর্শন বহন করে।

মানব বিবেক ও চেতনা

মানুষের ভিতরে থাকা ন্যায়-অন্যায় বোধ, মায়া-মমতা, নৈতিক চিন্তা—এসব কেবল জৈবিক ক্রিয়া নয়। এগুলো স্রষ্টার দ্বারা প্রদত্ত আত্মিক দিক, যা আল্লাহর অস্তিত্বের এক অন্তর্নিহিত প্রমাণ।

প্রকৃতির ভারসাম্য

রাত-দিনের পালাবদল, ঋতু পরিবর্তন, গাছপালা ও প্রাণীর জীবনচক্র—সব কিছু এক অসীম জ্ঞানের অধিকারী সত্ত্বার নিয়ন্ত্রণে। এ ভারসাম্য কাকতালীয় নয়, বরং আল্লাহর নিখুঁত সৃষ্টির নমুনা।

ইসলামের মূল ভিত্তি

ইসলাম ধর্মের মূল বিষয় বা ভিত্তিসমূহকে সাধারণত "ইসলামের পাঁচ স্তম্ভ" বা "ইসলামের মূল ভিত্তি" বলা হয়। এগুলো মুসলিমদের জীবনধারার ভিত্তি এবং ঈমানের প্রকাশ।

সংশয়.কম সম্পর্কে: লক্ষ্য, উদ্দেশ্য ও পথচলা

 
04/12/2025
 

ইসলামের মৌলিক বিশ্বাসসমূহ

ইসলামের মৌলিক বিশ্বাসসমূহকে বলা হয় "ঈমানের ছয়টি রুকন (মূলনীতি)"। এই ছয়টি বিষয়ে বিশ্বাস রাখা প্রত্যেক মুসলমানের জন্য আবশ্যক (ফরজ) :

১. আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস (إيمان بالله)

২. ফেরেশতাদের প্রতি বিশ্বাস (إيمان بالملائكة)

৩. আসমানী কিতাবসমূহের প্রতি বিশ্বাস (إيمان بالكتب السماوية)

৪. নবী ও রাসূলদের প্রতি বিশ্বাস (إيمان بالرسل)

৫. পরকাল ও হাশরের ময়দানের প্রতি বিশ্বাস (إيمان باليوم الآخر)

৬. তাকদির বা ভাগ্যের প্রতি বিশ্বাস (إيمان بالقدر)

 

কোরআন ও হাদিস

কোরআন আল্লাহ্‌র পক্ষ থেকে নাজিলকৃত শেষ ও চূড়ান্ত গ্রন্থ, যা মানবজীবনের পূর্ণাঙ্গ দিকনির্দেশনা। হাদিস নবী মুহাম্মাদ (সা.)-এর কথা ও কাজ, যা কোরআনের ব্যাখ্যা ও বাস্তব প্রয়োগের রূপ।

 

সংশয় ‍ও জবাব

সংশয় মানুষের মনে ধর্ম, স্রষ্টা বা বিশ্বাস নিয়ে উদ্ভূত প্রশ্ন, দ্বিধা বা বিভ্রান্তি—যা সচরাচর তথ্যের অভাব, ভুল ব্যাখ্যা বা নেতিবাচক প্রভাব থেকে সৃষ্টি হয়। জবাব হলো যুক্তিনির্ভর, কুরআন-সুন্নাহভিত্তিক ও বাস্তবসম্মত ব্যাখ্যা, যা সংশয় দূর করে ঈমানকে দৃঢ় করে। ইসলাম সংশয়ের প্রতি বিদ্বেষ নয়, বরং জ্ঞান ও প্রমাণের মাধ্যমে সন্তুষ্টিজনক জবাব দেয়—এটাই ইসলামের সৌন্দর্য।

 

ইসলাম ও বিজ্ঞান

ইসলাম কোনো অন্ধবিশ্বাস নয়—এটি বুদ্ধি, প্রমাণ ও গবেষণাভিত্তিক জীবনব্যবস্থা, যা জ্ঞানের প্রতি উদ্বুদ্ধ করে। বিজ্ঞান আবিষ্কার করে সৃষ্টি জগতের নিয়ম-কানুন, আর ইসলাম সেই স্রষ্টার কথা বলে যিনি এই নিয়ম সৃষ্টি করেছেন। ইসলাম পর্যবেক্ষণ, অনুসন্ধান ও যুক্তি ব্যবহারকে উৎসাহিত করে, যা একে বিজ্ঞানমনস্ক ধর্মে রূপ দেয়

 

নাস্তিকতা ও উত্তর

নাস্তিকতা হলো এমন একটি দৃষ্টিভঙ্গি, যেখানে স্রষ্টা, ধর্ম বা পরকাল বিশ্বাস করা হয় না। এটি মূলত যুক্তির অভাব, ভুল ধারণা, বা ধর্মীয় অপব্যাখ্যার ফলেও জন্ম নিতে পারে। ইসলাম এসব সংশয়কে উপেক্ষা করে না—বরং প্রমাণ, যুক্তি ও কুরআন-হাদিসভিত্তিক ব্যাখ্যার মাধ্যমে সন্তোষজনক উত্তর দেয়।

 

যুক্তি ও দর্শন

যুক্তি হলো সঠিক চিন্তা, প্রমাণ ও যুক্তির মাধ্যমে সত্য অনুসন্ধান। ইসলামে যুক্তি ও যুক্তিবাদী চিন্তা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কোরআন ও হাদিসে বারবার বিবেক এবং বুদ্ধির ব্যবহার করার ওপর জোর দেওয়া হয়েছে। দর্শন হলো গভীর চিন্তা এবং বিশ্ব সম্পর্কে প্রশ্ন করা। ইসলাম বিশ্ব, জীবন এবং মানবতার উদ্দেশ্য নিয়ে প্রশ্ন করার এবং সেগুলোর উত্তর খোঁজার স্বাধীনতা দেয়। তবে, দর্শন ও যুক্তি সর্বদা আল্লাহর অস্তিত্ব, তাওহীদ এবং আখিরাত এর সত্যতার প্রতি কেন্দ্রীভূত হতে হবে।

 

চ্যালেঞ্জ

নাস্তিকতা হচ্ছে এমন একটি দৃষ্টিকোণ, যেখানে স্রষ্টা বা ধর্মের অস্তিত্ব অস্বীকার করা হয়। ইসলাম এটি চ্যালেঞ্জ করে বিশ্বাস এবং যুক্তির ভিত্তিতে সত্য প্রমাণ করার চেষ্টা করে। ইসলাম নাস্তিকতার সংশয়কে যুক্তি, প্রমাণ এবং প্রকৃতির নির্দিষ্ট নিদর্শনের মাধ্যমে চ্যালেঞ্জ জানায় এবং স্রষ্টার অস্তিত্বের সত্যতা প্রতিষ্ঠা করে।

 

নবী ও রাসূল

ইসলামে নবীরাসূল উভয়েই আল্লাহর নির্বাচিত প্রতিনিধি, নবী আল্লাহর কাছ থেকে নির্দেশনা প্রাপ্ত ব্যক্তি, যারা পূর্ববর্তী ধর্মের অনুসরণ করেন এবং নতুন আইন আনেন না। তারা তাদের সম্প্রদায়ের জন্য উপদেশ দেন। রাসূল নতুন ধর্ম ও বিধান নিয়ে এসেছেন এবং শুধুমাত্র তাদের সম্প্রদায়ের জন্য নয়, বরং সারা পৃথিবীর জন্য নতুন নিয়ম এবং বিধান প্রদান করেন।

ইসলামি আকীদা বা বিশ্বাসসূমহ

১। কালিমা তাইয়্যিবা (Kalima Tayyibah)

لَا إِلٰهَ إِلَّا اللّٰهُ مُحَمَّدٌ رَّسُوْلُ اللّٰهِ

Laa ilaaha illallah, Muhammadur rasoolullah

আল্লাহ ছাড়া কোনো উপাস্য নেই; মুহাম্মাদ (সা.) আল্লাহর রাসুল।

২. কালিমা শাহাদাত (Kalima Shahadat)

أَشْهَدُ أَنْ لَا إِلٰهَ إِلَّا اللّٰهُ وَحْدَهُ لَا شَرِيْكَ لَهُ وَأَشْهَدُ أَنَّ مُحَمَّدًا عَبْدُهُ وَرَسُوْلُهُ

Ashhadu allaa ilaaha illallah wahdahu laa shareeka lahu, wa ashhadu anna Muhammadan ‘abduhoo wa rasooluh

আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ছাড়া কোনো উপাস্য নেই, তিনি একক, তাঁর কোনো শরীক নেই। এবং আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, মুহাম্মাদ (সা.) তাঁর বান্দা ও রাসুল।

৩. কালিমা তামজিদ (Kalima Tamjeed)

سُبْحَانَ اللّٰهِ وَالْحَمْدُ لِلّٰهِ وَلَا إِلٰهَ إِلَّا اللّٰهُ وَاللّٰهُ أَكْبَرُ. وَلَا حَوْلَ وَلَا قُوَّةَ إِلَّا بِاللّٰهِ الْعَلِيِّ الْعَظِيْمِ

Subhaanallaahi wal hamdu lillaahi wa laa ilaaha illallaahu wallaahu akbar. Walaa hawla wa laa quwwata illa billaahil ‘aliyyil ‘azeem
আল্লাহ পবিত্র, সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর, আল্লাহ ছাড়া কোনো উপাস্য নেই এবং আল্লাহ মহান। এবং শক্তি ও ক্ষমতা কেবল মহান ও শ্রেষ্ঠ আল্লাহর কাছ থেকেই আসে।

৪. কালিমা তাওহিদ (Kalima Tawheed)

لَا إِلٰهَ إِلَّا اللّٰهُ وَحْدَهُ لَا شَرِيْكَ لَهُ، لَهُ الْمُلْكُ وَلَهُ الْحَمْدُ يُحْيِيْ وَيُمِيْتُ، وَهُوَ حَيٌّ لَا يَمُوْتُ أَبَدًا أَبَدًا، ذُو الْجَلَالِ وَالْإِكْرَامِ، بِيَدِهِ الْخَيْرُ، وَهُوَ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيْرٌ

Laa ilaaha illallaahu wahdahu laa shareeka lahu, lahul mulku walahul hamdu, yuhyee wa yumeet, wa huwa hayyul laa yamootu abadan abadaa, zul jalaali wal ikraam, biyadihil khayr, wa huwa ‘alaa kulli shay’in qadeer

আল্লাহ ছাড়া কোনো উপাস্য নেই; তিনি একক, তাঁর কোনো শরীক নেই। তাঁরই রাজত্ব, তাঁরই সমস্ত প্রশংসা। তিনিই জীবন দেন ও মৃত্যু দেন, তিনি চিরঞ্জীব, কখনো মরবেন না। তিনি মহিমান্বিত ও সম্মানিত। কল্যাণ তাঁর হাতেই, তিনি সর্ববিষয়ে সর্বশক্তিমান।

৫. কালিমা রদ্দে কুফর (Kalima Radd-e-Kufr)

اَللّٰهُمَّ إِنِّى أَعُوْذُبِكَ مِنْ أَنْ أُشْرِكَ بِكَ شَيْئًا وَأَنَا أَعْلَمُ بِهِ وَأَسْتَغْفِرُكَ لِمَا لَا أَعْلَمُ بِهِ، تُبْتُ عَنْهُ وَتَبَرَّأْتُ مِنَ الْكُفْرِ وَالشِّرْكِ وَالْكِذْبِ وَالْغِيْبَةِ وَالْبِدْعَةِ وَالنَّمِيْمَةِ وَالْفَوَاحِشِ وَالْبُهْتَانِ وَالْمَعَاصِيْ كُلِّهَا وَأَسْلَمْتُ وَأَقُوْلُ لَا إِلٰهَ إِلَّا اللّٰهُ مُحَمَّدٌ رَّسُوْلُ اللّٰهِ

Allahumma inni a’udhu bika min an ushrika bika shay’an wa ana a’lamu bihi wa astaghfiruka lima la a’lamu bihi, tubtu ‘anhu wa tabarra’tu minal kufri wash-shirki wal-kidhibi wal-ghibati wal-bid’ati wan-namimati wal-fawahishi wal-buhtani wal-ma’aasi kulliha wa aslamtu wa aqoolu laa ilaaha illallaahu Muhammadur rasoolullah

হে আল্লাহ! আমি জেনে বা না জেনে আপনার সঙ্গে কাউকে শরীক করা থেকে আপনার নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করছি। আমি সে সম্পর্কে যা জানি না, তাও আপনার নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করছি। আমি সমস্ত কুফর, শিরক, মিথ্যা, পরনিন্দা, বিদআত, চোগলখুরি, অশ্লীলতা, অপবাদ ও সব গুনাহ থেকে তওবা করেছি এবং নিজেকে মুক্ত ঘোষণা করেছি। আমি ইসলাম গ্রহণ করেছি এবং সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ছাড়া কোনো উপাস্য নেই, মুহাম্মাদ (সা.) আল্লাহর রাসুল।

Learn more

আল্লাহুর অস্তিত্ব সম্পর্কে বৈজ্ঞানিক ও দার্শনিকদের যুক্তিসমূহ

দার্শনিক ও বৈজ্ঞানিক যুক্তির ভিত্তিতে অনেকেই বিশ্বাস করেন, আল্লাহর অস্তিত্ব নিছক বিশ্বাস নয়, বরং যুক্তিসম্মত উপলব্ধি।

রজার পেনরোজ (Roger Penrose

“The precision of the universe’s design is beyond comprehension.”
(এই মহাবিশ্বের সূক্ষ্মতা এমন যে তা উদ্দেশ্যপূর্ণ সৃষ্টি ছাড়া ব্যাখ্যা করা যায় না।)

আলবার্ট আইনস্টাইন (Albert Einstein)

“The more I study science, the more I believe in God.”  

(আমি যত বেশি বিজ্ঞান শিখি, ততই সৃষ্টিকর্তায় বিশ্বাস করি।)

আইজ্যাক নিউটন (Isaac Newton)

“In the absence of any other proof, the thumb alone would convince me of God’s existence.”

(শুধু একটি আঙুলের গঠনের মধ্যেই আমি সৃষ্টিকর্তার প্রমাণ পাই।)

সংশয়বাদী বনাম নাস্তিকতা

 

নাস্তিকদের প্রচলিত বই/যুক্তি বিশ্লেষণ

নাস্তিক্যবাদীর যুক্তিগুলোর মূল ভিত্তি—ধর্মের ভুল ব্যাখ্যা, আবেগের অতিরঞ্জন এবং ইতিহাসের বিচ্ছিন্ন ঘটনা। ইসলামের আলোকে যুক্তি ও জ্ঞানের মাধ্যমে এসব প্রশ্নের পরিপূর্ণ ও শান্তিপূর্ণ জবাব দেওয়া হলো।

ইসলামিক যুক্তি, দাওয়াহ, বিতর্ক

কোরআন-সুন্নাহর আলোকে তাওহিদ, রিসালাত ও আখিরাতসহ গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের যৌক্তিক উত্তর প্রদানের কৌশল, নাস্তিকদের নিকটে ইসলামের বার্তা শান্তিপূর্ণ ও যুক্তিসম্মতভাবে পৌঁছানো ও তাদের ভ্রান্ত ধারণার বিরুদ্ধে যুক্তিভিত্তিক বিতর্ক ও প্রশ্নোত্তরের দক্ষতা অর্জন।

সচরাচর জিজ্ঞাসা

ইসলাম একমাত্র ধর্ম যা কোরআনের মাধ্যমে বিজ্ঞান, ইতিহাস ও নৈতিকতা—তিনটি স্তরে পরীক্ষিত ও প্রমাণিত হয়েছে। এতে রয়েছে বিকৃতিহীন গ্রন্থ, বাস্তবসম্মত বিধান ও সর্বজনীন শিক্ষা।

হ্যাঁ, কোরআন এমন বহু তথ্য দিয়েছে যা ১৪০০ বছর পরে বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমাণিত হয়েছে। এটি আরব সাহিত্যের শ্রেষ্ঠত্বেও অতুলনীয়, যা মানুষের পক্ষ থেকে রচনা অসম্ভব।

"ইসলাম" শব্দটির অর্থই "শান্তি ও আত্মসমর্পণ"। প্রকৃত ইসলাম সহিংসতা নয়, বরং ন্যায়, সহনশীলতা ও মানবকল্যাণে বিশ্বাস করে।

ইসলাম তাত্বিক যুুক্তি, প্রায়োগিক প্রমাণ ও বিশ্বাস —এই তিন পদ্ধতিতে জবাব দেয়। তাওহিদ, সৃষ্টি, উদ্দেশ্য ও নৈতিকতা সম্পর্কে কোরআনের উত্তরগুলো যুক্তিনির্ভর ও হৃদয়স্পর্শী।